পূজায় এলো খুশির বান ঘুরতে যাব বান্দরবান

প্রকাশঃ অক্টোবর ২০, ২০১৫ সময়ঃ ১২:২২ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১২:২৯ অপরাহ্ণ

মোঃ বাছের আলী

Bandarbanঢাকের বাদ্য আর উলুধ্বনির আহ্বানে বছর ঘুরে আবার এল শারদীয় দুর্গোৎসব। পূজা মানেই আনন্দ। সেই আনন্দ ছুঁয়ে গেছে ছোট বড় সবার মন। তাইতো এই আনন্দে কারো কারো মন অজান্তেই গেয়ে ওঠে অতি পরিচিত সেই গানটি ‍‍

“নতুন সাজে নতুন রঙে সেজেছে সবারই মন

               পূজোর দিনে হাসিগানে খুশীতে কাটে জীবন”

পূজার এ মৌসুমী প্রায় সকলেই এ মন্দির থেকে ও মন্দিরে ঘুরে বেড়িয়ে আনন্দে মেতে থাকেন । আর এই আনন্দের মাত্রাটাকে আরেকটু বাড়িয়ে দিতে পারে যদি পূজার এ লম্বা ছুটিটাকে কাজে লাগিয়ে একটু ঘুরে আসতে পারেন বান্দরবানের কয়েকটি দর্শনীয় স্থান থেকে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি এবং কক্সবাজার থেকে বান্দরবান বাস যোগাযোগ রয়েছে। বান্দরবান শহর থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে বালাঘাটা শহর। শহরটির মাঝেই রয়েছে জাদিপাড়ার রাজবিহার এবং উজানীপাড়ার বিহার। শহর থেকে চিম্বুকের পথে যেতে পড়বে বম ও ম্রো উপজাতীয়দের গ্রাম। প্রান্তিক হ্রদ, জীবননগর এবং কিয়াচলং হ্রদ আরও কয়েকটি উল্লেখ্য পর্যটন স্থান। রয়েছে মেঘলা সাফারী পার্ক, যেখানে রয়েছে দুটি সম্পূর্ণ ঝুলন্ত সেতু। সাঙ্গু নদীতে নৌকা ভ্রমণ, ভ্রমণ পিয়াসীদের জন্য হতে পারে এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা।এছাড়াও বান্দরবনে দেখা মিলবে, শৈলপ্রপাত আকর্ষণীয় পাহাড়ি ঝর্ণাটির। এছাড়া বাংলাদেশের উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ তাজিংডং এবং বৃহত্তম পর্বতশৃঙ্গ কেওক্রাডং এই বান্দরবান জেলাতেই অবস্থিত। এ জেলার অন্যতম আকর্ষন বগা লেক।

০১. চিম্বুক পাহাড়:chimbuk-pahar-bandarban

চিম্বুকে যাওয়ার পথের পাশে রয়েছে অসংখ্য উপজাতির আবাসস্থল। ঘরগুলো মাচার মতো উঁচু করে তৈরী বান্দরবান থেকে পুরো রাস্তা আকাবাঁকা-উচুনিচু। চিম্বুকের চূড়া থেকে যেদিকে তাকাবেন সেদিকেই শুধু পাহাড় আর পাহাড়। সবুজ-শ্যামল পাহাড়ের দৃশ্য চোখ জুড়ানোর অবস্থা। পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে প্রবাহমান সাংগু নদী যা আপনাকে নিয়ে যাবে অনেক দূরে। কথিত আছে এ পাহাড়েই দাড়িয়ে এক সময় মেঘ ছোঁয়া যেত।

যেভাবে যাবেন:

ঢাকা থেকে বাস/ট্রেন/বিমানযোগে চট্রগ্রাম এসে সেখান থেকে বাসে বান্দরবান যাওয়া যায়। বান্দারবান থেকে চিম্বুকে যেতে হবে জিপ গাড়িতে। যাকে স্থানীয়ভাবে বলা হয় চান্দের গাড়ি। চান্দের গাড়িতে গেলে নামতে হবে বুলি বাজারে। ভাড়া করা জিপ নিয়ে সরাসরি চূড়ায় যাওয়া যায়। নিজস্ব জিপ নিয়েও যাওয়া যায়। বান্দরবান জেলা সদর থেকে ৩৬৪ টি ছোট-বড় মোড় অতিক্রম করে ২৬ কিঃমিঃ দূরে চিম্বুকে যেতে হবে।

রাত্রি যাপন:

থাকার জন্য রয়েছে নানা রকম আবাসিক হোটেল। সরকারী রেস্টহাউসসহ জেলা পরিষদ, সড়ক ও জনপথ, বন বিভাগ, এলজিইডি ও পার্বত্য জেলা পরিষদের রেস্টহাউসও রয়েছে। এছাড়াও বান্দরবান জেলা থেকে ৪.২ কিঃমিঃ দূরে চিম্বুক সড়কের মিলনছড়িতে রয়েছে দি গাইড টু্রস লিঃ এর হিল সাইড রিসোর্ট। এখানে থাকার জন্য রয়েছে বেশ কয়েকটি মনোরম কটেজ ঘর ও ডরমিটরি।

০২. নীলগিরি:Nilgiri Bandarban

বান্দরবান সদর থেকে প্রায় ৪৭ কিলোইমটার দক্ষিণ পূর্ব দিকে বান্দরবান-থানছি সড়কে পাহাড় চূড়ায় নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্র অবস্থিত। যা সমুদ্র পৃষ্ঠ হতে প্রায় ২ হাজার ২ শত ফুট উচু। সে কারনে দিনের বেলায় এই স্থান থেকে খালি চোখে বঙ্গোপসাগরে জাহাজ চলাচলের দৃশ্য দেখা যায়। এছাড়া ছোট ছোট পাহাড়ের কোল ঘেয়ে বয়ে যাওয়া সাঙ্গু নদীর আকাবাকা দৃষ্টিনন্দন দৃশ্য সকলকে আকর্ষণ করে।

০৩. মেঘলা পর্যটন কমপেস্নক্স:Mekhla

বান্দরবান কেরানীহাট সড়কের পাশে পাহাড়বেষ্টিত স্বচ্ছ জলোর মনোরম লেক। বান্দরবান শহর থেকে ৪.৫ কিলোমিটার দূরে এই কমপেস্নক্স রয়েছে চিত্তবিনোদনের নানাবিধ উপকরণ।

যেভাবে যাবেন:

শহর থেকে চান্দের গাড়ি বেবি টেক্সি, জীপ, কারে যাওয়া যায়। এখানে একটি মনোরম কৃত্রিম হ্রদ, শিশু পার্ক, সাফারী পার্ক, পেডেল বোট, ঝুলন্ত ব্রিজ , চিড়িয়াখানা, পিকনিক স্পট রয়েছে।

অবকাশ যাপন: এখানে থাকার জন্য একটি সুন্দর রেস্ট হাউজ রয়েছে, যেখানে রাত্রিযাপন করা যায়। রেস্ট হাউজটি দৈনিক ভিত্তিতে ভাড়ায় পাওয়া যায়।

০৪. বগালেক:Bogaleg-Pic-10-2-15

সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩ হাজার ফুট উঁচু পাহাড়ের উপরে প্রায় ১৫ একর জায়গা জুড়ে বগালেকের অবস্থান। কেওক্রাডং এর কোল ঘেঁষে বান্দারবান শহর থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে এবং রুমা উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরে এর অবস্থান। এ লেকের পাশে বাস করে পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র উপজাতীয় বম ও খুমী সম্প্রদায়। এখনও পর্যন্ত এই অদ্ভুদ সুন্দর নীল রঙ্গের লেকের সঠিক গভীরতা বের করা যায়নি । স্থানীয়ভাবে দুইশ’ থেকে আড়াইশ’ ফুট বলা হয়। এটি সম্পূর্ণ আবদ্ধ একটি লেক। এর আশেপাশে পানির কোন উৎসও নেই।

রাত্রি যাপন:

থাকার জন্য জন্য বগালেকে জেলা পরিষদের অর্থায়নে একটি রেষ্টহাউস নির্মান করা হয়েছে। এছাড়া স্থানীয় বম উপজাতী সম্প্রসাদায় কিছু ঘর ভাড়ায় দিয়ে থাকে । বগালেকের পাড়েই বসবাসরত বম সম্প্রদায় পর্যটকদের জন্য রান্না-বান্নার ব্যবস্থা করে থাকে । রুমা বাজার থেকে প্রয়োজনীয় শুকনো খাবার ক্রয় করে নেওয়াই শ্রেয়।

যেভাবে যাবেন:

শুষ্ক মৌসুমে বান্দরবান জেলা সদরের রুমা জীপ ষ্টেশন থেকে রুমাগামী জীপে করে রুমা সেনা গ্যারিসন (রুমা ব্রীজ) পর্যন্ত যাওয়া যায়। সেখান থেকে নৌকায় করে ২০ মিনিট পথ পাড়ি দিয়ে রুমা উপজেলা সদরে যেতে হয়। পথ পাড়ি দিয়ে রুমা সদরে যেতে হয় । রুমা থেকে পায়ে হেটে অথবা জীপে করে বগালেক যেতে হয় । বর্ষা মৌসুমে বগা লেক যাওয়া নিতান্তই কষ্টসাধ্য তাই বগালেক ভ্রমনে শীতকালকে বেছে নেওয়া শ্রেয়ে।

০৫. শৈলপ্রপাত:Solo-prapat-1_02_newsnextb

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপূর্ব সৃষ্টি হিমশীতল পানির ঝর্না শৈলপ্রপাত বান্দরবান রুমা সড়কের ৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এই ঝর্ণার পানিগুলো খুবই স্বচ্ছ এবং হীম শীতল। বর্ষাকালে এ ঝর্ণার দৃশ্য দেখা গেলেও ঝর্ণাতে নামা দুস্কর । এখানে দুর্গম পাহাড়ের কোল ঘেশা আদিবাসী বম সম্প্রদায়ের সংগ্রামী জীবন প্রত্যক্ষ করা।

যেভাবে যাবেন:

বান্দরবান শহর থেকে টেক্সি, চাঁদের গাড়ি কিংবা প্রাইভেট কার ও জীপ ভাড়া করে শৈলপ্রপাতে যাওয়া যায়। শহর থেকে জীপ গাড়ীতে ৬০০-৭০০ টাকা এবং চাঁদের গাড়ীতে ৪৫০-৫০০ টাকা লাগবে।

০৬. প্রান্তিক লেক:prantik lake

নামে আর গুনে প্রান্তিক লেক যেন প্রকৃতির এক অপার সৃষ্টি।কাব্যিক আর মোহনীয় রূপ নিয়ে সবুজ আর নীলের আঁচল বিছিয়ে শুয়ে আছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য মন্ডিত প্রায় ২৯ একর এলাকা নিয়ে হ্রদটির অবস্থান। কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে এখানে মাছ শিকার করার সুযোগ রয়েছে।

যেভাবে যাবেন:

বান্দরবান থেকে কেরাণীহাট যাবার পথে হলুদিয়া নামক স্থানে এটি অবস্থিত। কেরাণীহাট থেকে ২০ মিনিট গাড়ি চালালে এ লেকে পৌছানো সম্ভব। জেলা সদর থেকে প্রান্তিক লেকের দূরত্ব প্রায় ১৪ কিলোমিটার। প্রান্তিক লেকে খাবার ও রাত্রি যাপনের কোন ব্যবস্থা নেই। দিনে এসে দিনেই ফিরে যেতে হবে। এখানে পর্যটকদের নিজেদের খাবার ও পানি নিয়ে যেতে হবে। রাত্রি যাপনের জন্য মেঘলা অথবা বান্দরবান শহরে ফিরে যেতে হবে।

০৭. তাজিংডং:taging dong

বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ তাজিংডং (১০০৩ মিটার) বান্দরবান জেলায় অবস্থিত, যা “বিজয়” বা “মদক মুয়াল” নামেও পরিচিত। বান্দরবান সদর হতে প্রায় ৭০ কিলোমিটার রুমা উপজেলায় এটির অবস্থান

যাতায়াত ও থাকার ব্যবস্থা:

কেবলমাত্র শুষ্ক মৌসুমে গাড়ি করে কাছাকাছি পৌঁছানো সম্ভব। বান্দরবান সদর হতে অথবা রুমা উপজেলা সদর হতে চাঁন্দের গাড়ি ভাড়া পাওয়া যায়। থাকার জন্য রুমাতে জেলা পরিষদসহ অন্যান্য রেস্ট হাউসে থাকার সুবিধা আছে।

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G